মাত্র চার দিন আগে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পরিবারে অভাব-অনটন, তাই একটি চাকরির সন্ধান করছিল কিশোর মো. শাহেদ। স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরির ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন জানিয়ে শাহেদের কাছে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়েছিলেন পরিচিত এক ব্যক্তি। একটি মোটরসাইকেলে করে তাঁকে এসব কাগজপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় শাহেদের।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের ছড়ারকুল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। একটি পণ্যবাহী ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় শাহেদের। নিহত শাহেদ মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর গ্রামের মো. আবুল কালামের ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার সরকারহাট এনআর উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে শাহেদ। গতকাল দুর্ঘটনার সময় শাহেদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে তার আরও তিন বন্ধু ছিল। তারাও দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। তারা একই এলাকার বাসিন্দা এবং সবাই এসএসসির ফলপ্রার্থী।
আজ বুধবার সকালে নিহত শাহেদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের চালা আর বাঁশের বেড়ার দুই কক্ষের একটি ঘর শাহেদদের। সেই ঘরের দাওয়ায় ও উঠানে বসে আহাজারি করছিলেন শাহেদের দাদি মনোয়ারা বেগম, মা স্বপ্না বেগমসহ অন্য স্বজনেরা। কথা হয় শাহেদের মা স্বপ্না বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বামী কালাম, ছেলে শাহেদ, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে সামিয়া আক্তার ও শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে তাঁর সংসার। স্বামী গাছের ব্যবসা করে সংসার চালান। পাহাড়ের কোলে দুর্গম এলাকায় বাড়ি হওয়ায় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য স্থানীয় নিজামপুর বাজারে ছোট একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছেন।
স্বপ্না বেগম আরও বলেন, ‘আমার ছেলে খুব মেধাবী ছিল। সংসারে অভাব দেখে এসএসসি পরীক্ষার পর অবসরের সময়টায় একটা চাকরি করতে চেয়েছিল। গতকাল সন্ধ্যায় প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র নিয়ে একজনের সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলে ঘর থেকে বের হয়। সেই যে গেল, আমার সোনার টুকরা ছেলেটা আর ফিরে আসেনি। সড়কে ট্রাক ওর মাথা থেঁতলে দিয়েছে।’
গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় শাহেদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানান স্বপ্না বেগম। শাহেদের সঙ্গে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে তাঁর বন্ধু আরাফাত হোসেন ভূঁইয়া। সে প্রথম আলোকে বলে, শাহেদ পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিল। একজন তাকে বলেছিলেন মিরসরাইয়ের জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চাকরি পেতে সহযোগিতা করবেন। তাঁকে কাগজপত্র দিতে গতকাল সন্ধ্যায় নিজামপুর বাজার থেকে মোটরসাইকেলে করে বড়তাকিয়া বাজারের দিকে যাচ্ছিল শাহেদ। পথে তাকে একটি ট্রাক চাপা দেয়। শাহেদের মৃত্যুতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বন্ধুদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

